Logo

একটি সফল অভিযান

সংবাদ প্রকাশের তারিখ ২০১৭-১০-০৫
লেখক নাজমুল আলম

এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিল গুরুদাসপুরের কালাকান্দর এলাকায় নিয়মিত জুয়ার আসর বসছে। সে মোতাবেক জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের সার্বিক সহায়তায় গতকাল বিকাল ৫টার দিকে ঐ স্থানের উদ্দেশ্যে মোবাইল কোর্ট নিয়ে যাত্রা করি। ঘটনাস্থল- গুরুদাসপুর থেকে বিচ্ছিন্ন এক এলাকা।আমাদের খবর যেন জুয়াড়িদের কাছে না পৌছায় এজন্য বাজার এলাকা ও মেইন রাস্তা দিয়ে না গিয়ে, ভিতরের অন্য এক রাস্তা দিয়ে আমরা এগুতে থাকি। পাকা রাস্তায় নেমে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে প্রাণপণে দৌড়ে গর্ত,কাদা ভর্তি ক্ষেত, উঁচুনিচু পিচ্ছিল ঢিবি পেরিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তো চক্ষু চড়কগাছ। প্রায় দেড়শ থেকে দুইশ মানুষের উপস্থিতিতে এ যেন এক ক্যাসিনো । জনমানবহীন সেই প্রান্তরে রয়েছে রান্না-বান্না, সুপেয় পানি এমনকি টয়লেটের ব্যবস্থা। আমাদের দেখে জুয়াড়িরা যে যেদিকে পারে পালাতে শুরু করল। এক ব্যবস্থাপক এবং এক জুয়াড়িকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হল। অন্তত চারটি জুয়া বোর্ডের সন্ধান পেলাম। প্রচুর জুয়া খেলার সামগ্রী, ডিসকভার, সিটি বাজাজ, প্লাটিনা ব্রান্ডের ৫ টা মোটর সাইকেল বাজেয়াপ্ত করা হল। আসলে বাজেয়াপ্ত ঘোষনা করাটা সহজ ছিল, কিন্তু ঘাড় লক করা বাইকগুলো ঐ দুর্গম এলাকা থেকে কিভাবে সদরে আনব ভাবতেই আঁতকে উঠলাম। সে সময় এগিয়ে এল এলাকার সাধারণ মানুষ। ছোট-খাট একটা আনন্দ মিছিল তারা শুরু করল, তারাই বাইকগুলো থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পিক-আপ এনে দিল, পিক-আপে তুলেও দিল। শুনলাম সিরাজগঞ্জ, পাবনা থেকেও জুয়াড়িরা এখানে খেলতে আসে। রাতে গরু-ছাগল চুরি করা হয়, পরদিন সেসব রান্না করে তারা জুয়ার তাবুতে বসেই খায়। অসংখ্য নারীপুরুষ এসে ধন্যবাদ জানাল, দোয়া করল। তখন মনে হচ্ছিল জীবনটা সার্থক, অ্যাডমিন এ আসা সার্থক। পরিশেষে এল রায় ঘোষণার পালা। ব্যাবস্থাপককে তিন মাসের ও অপরজনকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করলাম।আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি ইউএনও গুরুদাসপুর স্যারকে, তাঁর সহায়তা ছাড়া এই সফল অভিযানটি সম্ভব হত না।একটু আগে অভিযোগকারীর সাথে ফোনে কথা হল, তিনি জানালেন তার পরিচিত জুয়াড়িরা নাকি বাড়িতে ফিরে কান ধরে বলেছে, আর জুয়া খেলবে না ।